প্রশ্নোত্তরে গ্রাম আদালত
প্রশ্নোত্তরে গ্রাম আদালত
১। কেন গ্রাম আদালত গঠন করা হয়?
উত্তর: দেশের প্রতিটি ইউনিয়নের এখতিয়ারধীন এলাকায় কতিপয় বিরোধ ও বিবাদ সহজ ও দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে গ্রাম আদালত গঠিত হয়।
২। গ্রাম আদালত কিভাবে গঠিত হয়?
উত্তর: ০৫ জন নিয়ে গঠিত (ক) ০১ জন চেয়ারম্যান (খ) ০২ জন বাদী পক্ষ (এর মধ্যে একজন ইউপি সদস্য) আবেদনকারী (গ) ০২ জন বিবাদী পক্ষ (এর মধ্যে একজন ইউপি সদস্য) প্রতিবাদী
৩। দ-বিধি ( The Penal Code) কি?
উত্তর: ১৮৬০ সালের ৪৫ নং আইন। মূলত এ আইনেই অধিকাংশ অপরাধের বিচার হয়।
৪। দেওয়ানী কার্যবিধি (Code of Civil Procedure)
উত্তর: ১৯০৮ সালের ০৫ নং আইন। সিভিল বিচারে এ আইনের প্রয়োগ হয়।
৫। ফৌজদারী কার্যবিধি (Code of Criminal Procedure)
উত্তর: ১৮৯৮ সালের ০৫ নং আইন। ফৌজদারী অপরাধের বিচার পদ্ধতির নির্দেশক।
৬। গ্রাম আদালত আইনের তফসিল সমূহ কী কী?
উত্তর: প্রথম অংশঃ ফৌজদারী মামলাসমূহ দ্বিতীয় অংশঃ দেওয়ানী মামলাসমূহ
৭। আমলযোগ্য অপরাধ কী?
উত্তর: আমলযোগ্য অপরাধ বলতে সেই অপরাধ বোঝায় যে অপরাধের জন্য পুলিশ বিনা গ্রেফতারি পরওয়ানায় আসামীকে গ্রেপ্তার করতে পারে।
৮। গ্রাম আদালত কর্তৃক বিচারযোগ্য মামলা কী কী ?
উত্তর: গ্রাম আদালত আইনের তফসিলের প্রথম অংশে ও দ্বিতীয় অংশে বর্ণিত বিষয়াবলী সম্পর্কিত ফৌজদারী ও দেওয়ানী মামলা। - কোন ফৌজদারী বা দেওয়ানী আদালতের অনুরূপ কোন মামলা বা মোকদ্দমার বিচার করা এখতিয়ার থাকবে না। - কোন ব্যক্তিকে পূর্বে গ্রাম আদালত দ- দলে সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা বিচার্য হবে না। দেওয়ানী মামলাও করা যাবে না। যদি- যদি কোন নাবালকের স্বার্থ জড়িত থাকে- যদি কোন উভয়পক্ষের মধ্যে কোন সালিশের চুক্তি থাকে এবং- যদি স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বা কর্তব্য পালনরত কোন সরকারী কর্মচারী উক্ত বিবাদের কোন পক্ষ হয়। - কোন সম্পত্তির দখল অর্পণ এর আদেশ দেয়া থাকলেও সেই সম্পত্তি দখল পুনরুদ্ধার নিয়ে বা স্বত্ব প্রতিষ্ঠা বিষয়ক মামলা করা যাবে।
৯। গ্রাম আদালত গঠিত হয় কখন?
উত্তর : কেউ গ্রাম আদালতে বিচার্য কোন বিষয়ে আদালত গঠনের জন্য সংশ্লিষ্ট ইউ: পি চেয়ারম্যানের নিকট আবেদন করলে-- নির্ধারিত পদ্ধতিতে আবেদন করতে হবে। - প্রতিটি মামলার জন্য একটি গ্রাম আদালত গঠন করতে হবে।
১০। চেয়ারম্যান কি গ্রাম আদালতের মামলার আবেদন নাকচ করতে পারেন?
উত্তর: হ্যাঁ, পারেন। তবে লিখিত কারণ দর্শানোপূর্বক আবেদনটি নাকচ করতে হবে।
১১। চেয়ারম্যান গ্রাম আদালতে মামলার আবেদন নাকচ করলে কি করা যায়?
উত্তর: আবেদন নামঞ্জুর করলে আবেদনকারী এখতিয়ার সম্পন্ন সহকারী জজ আদালতে রিভিশন আবেদন করতে পারেন। রিভিশন আবেদন-প্রাপ্তির পর সংশ্লিষ্ট সহকারী জজ ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে তা নিষ্পত্তি করবেন।
১২। সকল সময়ই কি ইউপি চেয়ারম্যানের গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যান হওয়া বাধ্যতামূলক ?
উত্তর: না। ইউপি চেয়ারম্যান গ্রাম আদালতে চেয়ারম্যান হবেন না। যদি (ক) চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হন(খ) চেয়ারম্যানের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়।
১৩। ইউপি চেয়ারম্যান গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যান না হলে কে চেয়ারম্যান হবেন?
উত্তর: গ্রাম আদালত গঠনের লক্ষ্যে পক্ষগণ কর্তৃক মনোনীত সদস্য ব্যতীত সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের অন্য কোন সদস্য গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যান হবেন। এ কার্যক্রমটি উপজেলা নির্বাহী অফিসার সম্পন্ন করবেন।
১৪। বাদী -বিবাদী একাধিক হলে কি করণীয় ?
উত্তর: চেয়ারম্যান পক্ষভূক্ত ব্যক্তিগণকে তাদের মধ্যে দুইজন সদস্য মনোনয়নের জন্য বলবেন। -তারা মনোনয়নদানে ব্যর্থ হলে পক্ষভূক্ত ব্যক্তিগণের মধ্যে যে কোন একজন সদস্য মনোনয়ের ক্ষমতা প্রদান করবেন এবং সে অনুযায়ী অনুরূপ ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি মনোনয়ন করবেন।
১৫। ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ব্যতীত অন্য কেউ কি গ্রাম আদালতের সদস্য মনোনীত হতে পারেন ?
উত্তর: হ্যাঁ পারেন। চেয়ারম্যানের অনুমতি সাপেক্ষে।
১৬। সদস্য মনোনয়নে পক্ষভূক্ত ব্যক্তিগণ ব্যর্থ হলে কি হবে?
উত্তর: চেয়ারম্যান লিখিতভাবে ব্যর্থতার কারণ উল্লেখ করে আবেদনকারী উপযুক্ত আদালতে মামলা করতে পারবে মর্মে নির্ধারিত পদ্ধতিতে সনদ প্রদান করে আবেদনপত্রটি আবেদনকারীর নিকট ফেরত দিবেন।
১৭। গ্রাম আদালত এর এখতিয়ার?অথবা, গ্রাম আদালত কোন ইউনিয়নে গঠিত হবে?
উত্তর: বাদী-বিবাদী ও ঘটনা একই ইউনিয়নে হলে সেই ইউনিয়ন পরিষদে আদালত গঠিত হবে। - বাদী-বিবাদী ভিন্ন ইউনিয়নের বাসিন্দা হলে যে ইউনিয়নে ঘটনা ঘটেছে সে ইউনিয়নে আদালত গঠিত হবে। - তবে বাদী- বিবাদীগণ নিজ নিজ ইউনিয়ন হতে সদস্য মনোনয়ন করতে পারবেন।
১৮। গ্রাম অদালতে মামলা দায়েরের সময়সীমা কতদিন?
উত্তর: ফৌজদারী মামলা:- ঘটনা সংঘটনের ৩০ দিনের মধ্যেদেওয়ানী মামলা :- কারণ উদ্ভবের ৬০ দিনের মধ্যে। তবে স্থাবর সম্পত্তি বেদখল হওয়ার এক (০১) বছরের মধ্যে দখল পুনরুদ্ধার এর মামলার করা যাবে।
১৯। গ্রাম আদালত গঠিত হওয়ার কত দিনের মধ্যে কার্যক্রম শুরু করতে হবে?
উত্তর: অনধিক ১৫ (পনের) দিন।
২০। প্রাক বিচারে প্রথম অধিবেশন কি হবে?
উত্তর: উভয় পক্ষের শুনানী,- মামলা বিচার্য নির্ধারণ - পক্ষগণের মধ্যে আপোষ বা মীমাংসার উদ্যোগ।
২১। আপোষ বা মীমাংসার উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে কত দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে?
উত্তর: উদ্যোগ গ্রহণের পরবর্তী ৩০ (ত্রিশ) দিন।
২২। আপোষনামায় কি কি থাকবে ?
উত্তর: (১) মীমাংসার শর্তাবলী(২) উভয়পক্ষের যৌথস্বাক্ষর/ বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির ছাপ। (৩) সাক্ষী হিসেবে উভয়পক্ষের মনোনীত সদস্যগণের আপোষনামায় স্বাক্ষর।
২৩। গ্রাম আদালতের আপোষনামার মাধ্যমে বিচার্য বিষয় নিষ্পত্তি হলে এর বিরুদ্ধে আপীল বা রিভিশন দায়ের করা যাবে কি?
উত্তর: না। এর বিরুদ্ধে কোন আপীল বা রিভিশন দায়ের করা যাবেনা ।
২৪। প্রাক বিচার কি?
উত্তর: মূল বিচারের প্রারম্ভে উভয় পক্ষের মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি।
২৫। প্রাক বিচার বা আপোষনামার মাধ্যমে কোন মামলা নিষ্পত্তি করা সম্ভব না হলে কি হবে?
উত্তর: আদালত ১৫ (পনের) দিনেরমধ্যে মামলাটির শুনানী কার্যক্রম শুরু করবে। এ পর্যায়ে যে কোন পক্ষ চেয়ারম্যানের অনুমতিক্রমে যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখিয়ে মনোনীত সদস্যকে পরিবর্তন করতে পারবেন।
২৬। মামলা নিষ্পত্তির সময়সীমা কত?
উত্তর: প্রাকবিচার পরবর্তী অনধিক ৯০ দিন । তবে এই সময়ে বিরোধ নিষ্পত্তি সম্ভব না হলে গ্রাম আদালত কারণ লিপিবদ্ধ করে পরবর্তী ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করবে অর্থাৎ সর্বোচ্চ সময়সীমা ১২০ দিন।
২৭। মামলার সময়কাল ১২০ দিন অতিবাহিত হলে কি হবে?
উত্তর: গ্রাম আদালত স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভেঙ্গে যাবে।
২৮। গ্রাম আদালত ১২০ দিনের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তিতে ব্যর্থ হলে বাদী- বিবাদীর করণীয় কি?
উত্তর: গ্রাম আদালত ভেঙ্গে যাওয়ার ৬০ (ষাট) দিনের মধ্যে উপযুক্ত আদালতে মামলা দায়ের করতে পারেন।
২৯। গ্রাম আদালতের দ- প্রদানের ক্ষমতা কত?
উত্তর: এই আইনে ভিন্ন কোন বিধান না থাকলে ৭৫০০০/- টাকা ।
৩০। দেওয়ানী মামলার ক্ষেত্রে গ্রাম আদালতের ক্ষমতা কি?
উত্তর: তফসিলে বর্ণিত দেওয়ানী মামলার ক্ষেত্রে (ক) দাবীকৃত অর্থের পরিমাণ ৭৫০০০/- টাকা হলে বা(খ) অস্থাবর সম্পত্তির মূল্য বা ৭৫০০০/- টাকা হলে বা(গ) অপরাধ সংশ্লিষ্ট স্থাবর সম্পত্তির মূল্য অনধিক ৭৫০০০/- টাকা ।
৩১। গ্রাম আদালতে সিদ্ধান্ত কখন উভয় পক্ষের জন্য বাধ্যকর হবে?
উত্তর: ৫ সদস্যের ৪ জন একমত হলে বা - ৪ সদস্যের ৩ জন একমত হলে।
৩২। গ্রাম আদালতের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কখন আপীল করা যাবে?
উত্তর: যখন ৫ জন সদস্যের ০৩ জন একমত এবং ০২ জন ভিন্নমত পোষণ করবেন।
৩৩। মামলাসমূহের রায়ের বিরুদ্ধে কত দিনের মধ্যে আপীল করতে হবে ?
উত্তর: ৩০ দিনের মধ্যে আপীল করতে হবে।
৩৪। ফৌজদারী মামলাসমূহের আপীল কোন আদালতে করতে হবে ?
উত্তর: এখতিয়ার সম্পন্ন প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।
৩৫। দেওয়ানী মামলাসমূহের আপীল কোন আদালতে করতে হবে ?
উত্তর: এখতিয়ারসম্পন্ন সহকারী জজ আদালতে করতে হবে।
৩৬। আপীল করার পর সংশ্লিষ্ট আদালত যদি মনে করেন সংক্ষুদ্ধ পক্ষ সুবিচার পাননি সে ক্ষেত্রে পরবর্তী কার্যক্রম কি হবে?
উত্তর: আদালত উক্ত সিদ্ধান্ত বাতিল বা পরিবর্তন করতে পারবে, অথবা - পুনর্বিবেচনার জন্য মামলাটি গ্রাম আদালতের নিকট ফেরত পাঠাতে পারবে।
৩৭। গ্রাম আদালত কর্তৃক গ্রাম আদালত আইনের বিধান অনুযায়ী কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হলে তা কি অন্য আদালত পুনরায় বিচার করতে পারে?
উত্তর: না, অন্য কোন গ্রাম আদালত বা অন্যকোন আদালতে তা আর বিচার্য হবে না।
৩৮। গ্রাম আদালত কিভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন ?
উত্তর: বিধি মোতাবেক নির্ধারিত পদ্ধতিতে এবং নির্দিষ্ট রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করবেন।
৩৯। গ্রাম আদালতের আদেশের পরও কোন পক্ষ অর্থ প্রদান না করলে করণীয় কি?
উত্তর: ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯ এর বিধান অনুযায়ী আদায় করে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষকে প্রদান করবেন।
৪০। গ্রাম আদালত ক্ষতিপূরণের অর্থ কিস্তিতে আদায়ের আদেশ দিতে পারেন কী ?
উত্তর: হ্যাঁ পারে।
৪১। গ্রাম আদালত কর্তৃক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ক্ষতিপূরণের অর্থ প্রদানে নির্দেশ হলে তা কত দিনের মধ্যে প্রদান করতে হবে?
উত্তর: চূড়ান্ত আদেশ প্রদানের ০৬ মাসের মধ্যে প্রদান করতে হবে।
৪২। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কোন আইন বা বিধি অনুযায়ী বকেয়া আদায় করেন ?
উত্তর: ইউনিয়ন পরিষদ (কর) বিধিমালা, ১৯৬০ অনুযায়ী ।
৪৩। কোন ব্যক্তি পাওনা প্রদানে ব্যর্থ হলে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কি করবেন?
উত্তর: বকেয়া তালিকা ইউনিয়ন পরিষদ নোটিশ বোর্ডে লটকে দিবেন। বকেয়া তালিকা নোটিশ বোর্ডে লটকানোর ১৫ দিন অতিবাহিত হলে তা সরকারি পাওনা হিসেবে আদায়ের পদক্ষেপ নিবেন।
৪৪। ইউনিয়ন পরিষদ কর বকেয়া আদায়ের জন্য জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত ও নিষ্পত্তি করতে পারবেন কী না?
উত্তর: স্থানীয় সরকার (ইউনিয় পরিষদ) আইন, ২০০৯ এর ৬৮ ধারার (৩) উপধারা অনুযায়ী ক্ষমতাপ্রাপ্ত হলে তিনি পারবেন।
৪৫। কোন ব্যক্তি গ্রাম আদালতে মিথ্যা মামলা করালে বা করলে কি শাস্তি?
উত্তর: অনধিক ৫ (পাঁচ) হাজার টাকা জরিমানা।
৪৬। মিথ্যা মামলা এর জন্য জরিমানাকৃত টাকা কে পাবেন?
উত্তর: এই টাকা মিথ্যা মামলা দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির জন্য ক্ষতিপূরণ হিসেবে গণ্য হবে।
৪৭। গ্রাম আদালত কখন সমন দিতে পারেন ?
উত্তর: (ক) কোন ব্যক্তিকে আদালতে হাজির হতে (খ) কোনব্যক্তিকে সাক্ষী দেওয়ার জন্য (গ) কোন দলিল দাখিল করার জন্য ।
৪৮। কোন সাক্ষী বা ব্যক্তির আবাস গ্রাম আদালত এখতিয়ারাধীন ইউনিয়নের বাহিরে হলে ঐ ব্যক্তির ভ্রমণ ও অন্যান্য খরচ কি প্রাপ্য হবেন?
উত্তর: হ্যাঁ, প্রাপ্য হবেন।
৪৯। গ্রাম অদালত কোন্ কোন্ ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে সমন দিতে পারবে না?
উত্তর: ক) যাদেরকে সরকার গেজেট প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আদালতে ব্যক্তিগতভাবে হাজিরা প্রদান থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। খ) যেসকল ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের অধিবাসী নয় এবং তাদের ভ্রমণ ও অন্যান্য খরচ বাবদ আদালত কর্তৃক নির্ধারিত অর্থ জমা না হয়, গ) রাষ্ট্রীয় গোপন দলিল বা অপ্রকাশিত সরকারি রেকর্ড দাখিল করার জন্য বা এ বিষয়ে সাক্ষ্য প্রদান করার জন্য ।
৫০। কোন ব্যক্তি সমন ইচ্ছা পূর্বক অমান্য করলে কি শাস্তি?
উত্তর: অভিযুক্ত ব্যক্তিকে তার বক্তব্য পেশের সুযোগ প্রদান সাপেক্ষে অনধিক ১ (এক) হাজার টাকা জরিমানা।
৫১। গ্রাম আদালতের অবমামনা করলে শাস্তি কি?
উত্তর: অনধিক ১ (এক) হাজার টাকা জরিমানা।
৫২। গ্রাম আদালত অবমাননা কখন হয়?
উত্তর: (ক) গ্রাম আদালত চলাকালে এর কোন সদস্যকে অশালীন কথাবার্তা, ভয়ভীতি প্রদর্শন, আক্রমণাত্মক বা অন্যবিধি আচরণ করলে;(খ) গ্রাম আদালত এর কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করলে ;(গ) গ্রাম আদালতের আদেশ সত্ত্বেও দলিল দাখিল বা অর্পণ বা হস্তান্তরে ব্যর্থ হলে;(ঘ) গ্রাম আদালতে বিধি অনুযায়ী জবাব দিতে বাধ্য কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে অস্বীকার করলে;(ঙ) সত্য কথা বলার শপথ গ্রহণে অস্বীকার করলে; (চ) প্রদত্ত জবান বন্দিতে স্বাক্ষর দিতে অস্বীকার করলে।
৫৩। গ্রাম আদালত কোন জরিমানা তৎক্ষণাৎ আদায়ে ব্যর্থ হলে কি করবেন?
উত্তর: অনাদায়ের কারণ উল্লেখপূর্বক একটি আদেশ ইউনিয়ন পরিষদে প্রেরণ করবেন।
৫৪। গ্রাম আদালতের নিকট জমাকৃত বা গ্রাম আদালতের আদেশে আদায়কৃত জরিমানার অর্থ কোথায় জমা থাকবে?
উত্তর: অর্থ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে তার পক্ষে আদায়কৃত অর্থ তাৎক্ষণিকভাবে তাকে প্রদান করা না গেলে তা ইউনিয়ন পরিষদের তহবিলে জমা করতে হবে।
৫৫। গ্রাম আদালতে দায়েরকৃত মামলার ক্ষেত্রে কোন কোন বিধানাবলী প্রযোজ্য হবে?
উত্তর:(ক) Evidence Act 1872 (খ) Code of Criminal Procedure-1898(গ)) Code of Civil Procedure এর ১০ ও ১১ ধারা
৫৬। গ্রাম আদালতে কোন কোন মামলার ক্ষেত্রে Oaths Act, 1873 প্রযোজ্য?
গ্রাম আদালতে সকল মামলায় Oaths Act, 1873 এর ৮,৯,১০, ও ১১ ধারা প্রযোজ্য।
৫৭। কোন সরকারী কর্মচারীর দায়িত্ব পালনকালে বা দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় অপরাধ সংঘটিত হলে সে অপরাধের বিচার কিভাবে হবে?
এ অবস্থায় সে সরকারী কর্মচারীর বিচারের জন্য তার নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমোদনের প্রয়োজন হবে।
৫৮। গ্রাম আদালতে কি আইনজীবি নিয়োগ করা যাবে?
উত্তর: না, কোন আইনজীবী নিয়োগ করতে পারবে না।
৫৯। গ্রাম আদালতে কোন কোন ব্যক্তি তার পক্ষে প্রতিনিধি নিয়োগ করতে পারবে ?
উত্তর:(ক) সরকারী কর্মচারী (যদি ঐ কারণে সরকারী কাজের ক্ষতি হয়)(খ) শারীরিকভাবে অক্ষম এবং(গ) পর্দানশীন বৃদ্ধ মহিলা
৬০। কোন সরকারী কর্মচারীর প্রতিনিধি হলে তিনি কত পারিশ্রমিক পাবেন?
উত্তর: কোন পারিশ্রমিক পাবেন না
৬১। গ্রাম আদালতের মামলা কখন স্থানান্তর হয়?
উত্তর: গ্রাম আদালতে কোন মামলা ফৌজদারী আদালতে স্থানান্তরের উপযুক্ত মনে হলে এবং অধিকতর শাস্তিযোগ্য মনে হলে বিজ্ঞ জুডিশিয়াল আদালতে স্থানান্তর করবেন।
৬২। গ্রাম আদালতে কয়টি পক্ষ থাকে?
উত্তর: দুইটি। ক) আবেদনকারী এবং খ) প্রতিবাদী পক্ষ। এই আইনে কাউকে অভিযোগকারী বা অভিযুক্ত বা আসামী বা প্রতিপক্ষ বলার সুযোগ নেই।
৬৩। গ্রাম আদালতে আবেদনে কোন ফিসের প্রয়োজন আছে কি?
উত্তর: হ্যাঁ। ফৌজদারী মামলা হলে ১০ টাকা এবং দেওয়ানী মামলা হলে ২০ টাকা হারে ফিস অবশ্যই প্রদান করতে হবে। অন্যথায় মামলা বৈধতা হারাবে।
৬৪। কোন জাতীয় মামলায় ফিস এর প্রয়োজন নেই?
উত্তর: দেওয়ানী বা ফৌজদারী আদালত হতে বিচারের জন্য গ্রাম আদালতে প্রেরিত হলে ফিস দেওয়ার প্রয়োজন নেই। ¬¬¬¬¬¬¬¬
৬৫। চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে মামলার আবেদন আসলে কী হবে?
উত্তর: প্যানেল হতে দায়িত্ব পালনকারী ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য (মেম্বার) গ্রাম আদালত গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।
৬৬। বিভিশন আবেদন নিষ্পত্তির সময় কতদিন?
উত্তর: সহকারী জজ আদালতে দাখিল হতে ৩০ দিনের মধ্যে রিভিশন নিষ্পত্তি করতে হবে।
৬৭। আবেদন গৃহীত হওয়ার পর হতে নিষ্পত্তি হওয়া পর্যন্ত সময়সীমা উল্লেখ করুন।
উত্তর: ক) আবেদন গৃহীত হওয়ার পর পথম ০৭ (সাত) দিনের মধ্যে আবেদনকারী এবং প্রতিবাদীকে হাজির হওয়ার তারিখ ও সময় উল্লেখ করে সমন দিতে হবে। খ) উভয় পক্ষ উক্ত তারিখে হাজির হলে ০৭ (সাত) দিনের মধ্যে প্রতিনিধি মনোনয়নের জন্য উভয় পক্ষ সময় দিতে হবে।গ) আবেদন গৃহীত হওয়ার পর (১ম হাজিরা৭দিন+প্রতিনিধি মনোনয়ন ৭দিন) সর্বোচ্চ ১৪ দিনের মধ্যে গ্রাম আদালত গঠন করতে হবে। অর্থাৎ পূর্বের দুই ধাপের যে কোনটিতে অনূর্ধ্ব ৭ (সাত) দিনের মধ্যে যেকোন দিন উল্লিখিত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। ঘ) আদালত গঠিত হওয়ার ০৩ (দিন) দিনের মধ্যে প্রতিবাদী আবেদনকারীর আবেদনের বিরুদ্ধে বিরোধীয় বিষয়ে লিখিত আপত্তি দাখিল করবেন মর্মে আদালত নির্দেশ দিবেন। আপত্তি ঐচ্ছিক বিধায় তা দাখিল না হলেও অন্যান্য কার্যক্রম গ্রহণ করা যাবে। ঙ) গ্রাম আদালত গঠনের পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে (এ সময় গ্রাম আদালত গঠিত হওয়ায় পূর্বের ১৪ দিনে বা এর কম যে সময় লাগে তার পরবর্তী) গ্রাম আদালতের অধিবেশনের তারিখ, সময় ও স্থান নির্ধারণ করবেন। উক্ত তারিখ ও সময়ে পক্ষগণ নিজ নিজ মামলায় সমর্থনে প্রয়োজনীয় সাক্ষী ( মৌখিক+ দালিলিক) উপস্থাপন করবেন। চ) উক্ত শুনানীতে বিচার্য বিষয় নির্ধারিত হলে বিচারক প্যানেল উভয় পক্ষের নিকট প্রাক বিচারের মাধ্যমে নিষ্পত্তির বিষয় উপস্থাপন করবেন। ছ) প্রাক বিচারের উদ্যোগ গ্রহণের দিন হতে ৩০ দিনের মধ্যে তা নিষ্পত্তি করতে হবে। জ) আপোষ নিষ্পত্তি হলে আপোষ বাস্তবায়ন আপোষ নামা সম্পাদনের পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে হতে হবে।
৬৮। চেয়ারম্যান এবং আদালতের এখতিয়ার কী কী?
উত্তর: ক) আবেদন গ্রহণযোগ্য বিবেচিত না হলে কারণ উল্লেখ পূর্বক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যন তা খারিজ করতে পারবে। খ) আদালত প্রাক বিচারে উভয় পক্ষের মধ্যে আপোষ নিষ্পত্তির উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারবে। গ) আপোষ না হলে বিচার্য বিষয়ে সাক্ষী প্রমাণ গ্রহণ করে সংখ্যা গরিষ্ঠের ভিত্তিতে ক্ষতিপূরণ আদায়ের উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারবে। ঘ) বিরোধীয় বিষয়ে প্রয়োজনে সরজমিনে তদন্ত করতে পারবে। ঙ) মামলার সাক্ষীকে জেরা কর পারবে। চ) আবেদনকারীর গড় হাজিরার কারণে আবেদন খারিজ করতে পারবে। ছ) প্রতিবাদী হাজিরা দিয়ে অনুপস্থিত থাকলে এবং গ্রাম আদালত গঠিত হওয়ার পর অনুপস্থিত থাকলে তার অনুপস্থিতিতেই বিচার নিষ্পত্তি করতে পারবে। জ) কেহ আদেশ অমান্য করলে বা অবজ্ঞা প্রদর্শন করলে আদালত অবমাননার দায়ে ১ (এক) হাজার) টাকা জরিমানা আদায় করতে পারবে। ঝ) কেহ মিথ্যা মামলা করলে তাকে ০৫ (পাঁচ) হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদানের আদেশ দিতে পারবে।
৬৯। সমন প্রদত্ত ও জারীর নিয়ম সমূহ কী কী?
উত্তর: ক) সমন প্রস্তুত ও জারীর সমুদয় খরচ বহন করবেন আবেদনকারীখ) সমন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কর্তৃক স্বাক্ষরিত ও সীলযুক্ত হতে হবে। গ) সমন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পক্ষে তার যে কোন কর্মচারী জারী করতে পারবেন। ঘ) সমন জারীর সময় তার উল্টা পৃষ্ঠে সমন গ্রহণ কারীর (প্রতিবাদী) বা তার পক্ষের কেহ স্বাক্ষর/ টীপসহি নিতে হবে। ঙ) সমন গ্রহণের কাউকে পাওয়া না গেলে সাক্ষী রেখে প্রতিবাদীর ঠিকানায় লটকিয়ে জারী করা যাবে। চ) প্রতিবাদীর ঠিকানা গ্রাম আদালতের এলাকার বাহিরে হলে রেজিষ্ট্রি ডাকযোগে (প্রাপ্তী স্বীক্ষার সহ) জারী করা যাবে।
৭০। গ্রাম আদালতের মামলায় নকল সরবরাহ করা যাবে কী ?
উত্তর: হ্যাঁ যাবে। চেয়ারম্যান প্রতিপৃষ্ঠা বা এর অংশ বিশেষের জন্য ০৫ (পাঁচ) টাকা হারে ফিস জমা নিয়ে নকল বা ফটোকপি দিতে পারবেন।
৭১। গ্রাম আদালত বাস্থবায়নের প্রতিবেদন প্রেরণে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান/ উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপপরিচালক, স্থানীয় সরকার এর দায়িত্ব ও সময় সীমা কী ?
উত্তর: ক) ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান প্রতি ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন ১০ তারিখের মধ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাহেবের বরাবর আবেদন গ্রহণ, নিষ্পত্তি ও পেন্ডিং বিষয়ে রির্পোট দিবেন। খ) উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাহেব প্রতিবেদন ২০ তারিখের মধ্যে উপপরিচালক, স্থানীয় সরকার সাহেব বরাবর উক্ত প্রতিবেদন সমূহ সমন্বিত করে প্রেরণ করবেন। গ) উপপরিচালক, স্থানীয় সরকার প্রতি ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে তা স্থানীয় সরকার বিভাগে প্রেরণ নিশ্চিত করবেন এবং জেলা প্রশাসক ও জেলা জজ সাহেবকে অনুলিপি দিবেন।
৭২। গ্রাম আদালত বাস্তবায়নে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এর ভূমিকা কী ?
উত্তর: ক) গ্রাম-আদালতের মামলা নিষ্পত্তি করণে চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিবেন খ) চেয়ারম্যান অযোগ্য হলে বা তার নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিলে মেম্বারদের মধ্য হতে একজনকে গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যান মনোনীত করবেন। গ) চেয়ারম্যান নিযুক্ত না হওয়া পর্যন্ত গ্রাম আদালতের কার্যবিধির ০৭ (সাত) দিন স্থগিত রাখতে পারবেন। ঘ) গ্রাম আদালত ক্ষতিপূরণের অর্থ আদায়ে ব্যর্থ হলে তার জেনারেল সার্টিফিকেট অফিসার হিসেবে চউজ অপঃ এর আওতায় মামলা নিয়ে অর্থ আদায়ের উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারবেন।
৭৩। গ্রাম আদালতের রেজিস্টার ও নথি সংরক্ষণের সময়সীমা কী ?
উত্তর: ক) রেজিস্টার সমূহ ১০ বছর সংরক্ষণ করতে হবে।খ) নথি সমূহ ০৩ (তিন) বছর সংরক্ষণ করতে হবে।
৭৪। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির পক্ষে আদায়কৃত অর্থ কত দিনের মধ্যে আবেদনকারীকে ফেরৎ দিতে হবে?
উত্তর: আদায়ের ০৭ (সাত) দিনের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি এবং সাক্ষীদের স্বাক্ষর গ্রহণপূর্বক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে ফেরৎ দিতে হবে।
৭৫। নথি দেখার অনুমতি গ্রাম আদালতে আছে কী ?
উত্তর: হ্যাঁ। যেকোন পক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০ টাকাহারে ফিস গ্রহণ পূর্বক পরিষদের চেয়ারম্যান গ্রাম আদালতের নথি দেখার অনুমতি দিবেন।
৭৬। শুনানী মূলতবীর সময় সর্বোচ্চ কতদিন ?
উত্তর: বিচার সম্পাদনকালে গ্রাম আদালত পর্যাপ্ত কারণ থাকলে মামলার শুনানী মূলতবী করতে পারবেন। তবে তা প্রতিক্ষেত্রে ৭ দিনের বেশী হবে না।
৭৭। কোন প্রক্রিয়ায় গ্রাম আদালত আবেদনকারীকে উর্ধ্বতন আদালতে মামলা করতে পরামর্শ দিতে পারবেন?
উত্তর: নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দরখাস্তকারী কিংবা প্রতিবাদী পক্ষ প্রতিনিধি মনোনয়নে ব্যর্থ হলে, দরখাস্তকারী উর্ধ্বতন আদালতে মামলা করতে পারবেন মর্মে গ্রাম আদালত সনদ প্রদান করতে পারবেন এবং আবেদরপত্রটি আবেদনকারীকে ফেরত প্রদান করবেন।
৭৮। মামলা অনিষ্পন্ন অবস্থায় গ্রাম আদালত ভেঙ্গে গেলে সংক্ষুদ্ধ পক্ষের করণীয় কী ?
উত্তর: নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণ আদালত ভেঙ্গে গেলে, সংক্ষুদ্ধ পক্ষ আদালত ভেঙ্গে যাবার ৬০ দিনের মধ্যে উর্ধতন আদালতে মামলা দায়ের করতে পারবেন।