ইয়াহুদি কারা?
ইয়াহুদী কারা?
ইসলামের জাতির পিতা হযরত ইব্রাহীম (আঃ) হতে দুটি বংশ আসে যার একটি আসে উনার এক স্ত্রী সারা (আঃ) হতে এবং অন্যটি আসে হাজেরা (আঃ) হতে।
সারা (আঃ) থেকে জেরুজালেমে(বর্তমান ইসরাইল) এবং হাজেরা (আঃ) হতে মক্কায় দুটি বংশের সৃষ্টি হয়। সারা (আঃ) এর পুত্র ছিলেন ইসহাক (আঃ) এবং হাজেরা (আঃ) এর পুত্র ইসমাইল (আঃ)। বস্তত ইসমাইল (আঃ) এর বংশে নবীর পরিমান ছিল একেবারেই কম।কিন্ত পৃথিবীর মহামানব নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) ছিলেন ইসমাইল (আঃ) এর বংশোদ্ভূত । অপরদিকে ইসহাক (আঃ) এর বংশে আল্লাহ অনেক নবী পাঠিয়েছেন।
ইসহাক (আঃ) এর পুত্র ইয়াকুব বা ইসরাইল (আঃ)। যার নাম হতেই মূলত বনী ইসরাইল বংশের শুরু।কুরানে এই বনী ইসরাইল এর কথা অসংখ্য বার উল্লেখ রয়েছে। একটি বিশেষ সুরা ও ররেছে বনী ইসরাইল এর নামে।
বনী ইসরাইল এর প্রতি আল্লাহর এক আদেশ ছিল এই রকম যে "তোমরা যদি তোমাদের অংগীকার পূরন কর আমিও আমার আমার অংগীকার পূরন করব, তোমরা যদি আমার প্রতি বিশ্বস্ত থাকো আমি তোমাদের সম্মানিত করব। অপরদিকে তোমরা যদি অবাধ্য হও তোমাকের লাঞ্চিত বঞ্চিত করা হবে। আল্লাহর এই আদেশ বনী ইসরাইল অমান্য করে। ফলে আল্লাহ বনী ইসরাইল দের তাদের নিবাস জেরুজালেম হতে উচ্ছেদ করে এবং অন্য জনগোষ্ঠীকে সেখানে স্থানান্তরিত করে।
ইসরাইল (আঃ) এর ১১ জন পুত্র ছিল যার মধ্যে ইউসুফ (আঃ) অন্যতম। ইউসুফ (আঃ) কে তার ভাইয়েরা কুয়ায় ফেলে দেয়। ঘটনার কালচক্রে আল্লাহ তায়ালা তাকে রক্ষা করেন। মিশরের এক রাজ পরিবার তাকে কিনে নেয়। তিনি আবার জেলে যান। আল্লাহ তায়ালা তাকে আবারো রক্ষা করেন এবন কালক্রমে মিশরের রাজা হন। রাজা হবার পর ইউসুফ (আঃ) তার পরিবার কে মিশরে নিয়ে আসে। অর্থাৎ বনী ইসরাইল আল্লার দয়ায় মিশরে বসবাস শুরু করে। কিন্ত বনী ইসরাইল আবারো আল্লাহর অবাধ্য হয় ফলস্বরুপ আল্লাহ তাদের রাজত্ব কেড়ে নেয় এবং মিশরেই তাদের ফেরাউনের দাসে পরিনত করেন।
ঘটনার কালচক্রে আল্লাহ বনী ইসরাইল এর প্রতি আবারো দয়া করেন এবং মূসা (আঃ) কে প্রেরন করেন এবং তাওরাত কিতাব নাজিল করেন।মূসা (আঃ) তাদের ফেরাউন হতে মুক্ত করেন আল্লাহর দয়ায়। অতঃপর একদিন মূসা (আঃ) তূয়া পাহাড়ে অবস্থান করেন এবং সেখান থেকে বাইতুল মুকাদ্দাস দেখে বনী ইসরাইল এর প্রতি বলেন যে" আল্লাহ তাহলে তোমাদের উপর জিহাদের আদেশ করেছেন। তখন বনী ইসরাইল জিহাদ কে অস্বীকার করে এবং বলে আমরা তাদের সাথে পারব না মূসা। তুমি আর তোমার আল্লাহ তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর আমরা বনী ইসরাইল এখানে অপেক্ষা করি।
আল্লাহর অবাধ্যতার জন্য আবারো বনী ইসরাইল লাঞ্চিত বঞ্চিত হয় এবং ৪০ বছর তূয়া পাহাড়ের উপত্যকার উদবাস্তু হয়ে থাকে।
আবারো আল্লাহ তাদের প্রতি দয়া করেন এবং ইউশা ইবনে নূন কে তাদের প্রতি প্রেরন করেন। তারা ইউশা ইবিনে নূন কে তাদের একজন রাজা নিযুক্ত করে দিতে বলেন যার নেতৃত্বে তারা যুদ্ধ করবে। তালুত নামের একজনকে তাদের রাজা নিযুক্ত করা হয়। যুদ্ধে যুবক দাউদ (আঃ) নিক্ষিপ্ত পাথরে শত্রুপক্ষের সেনাপতির চোখ আঘাত প্রাপ্ত হয়ে এবং বনী ইসরাইল যুদ্ধে জয়লাভ করে তাদের আদি নিবাস জেরুজালেম বা বায়তুল মুকাদ্দাসে ফিরে আসতে সক্ষম হয়। কালের বিবর্তনে দাউদ (আঃ) নবুওয়াত প্রাপ্ত হন এবং জেরুজালেমে ইসলামি শাসন কায়েম করেন। দাউদ (আঃ) এর পর তার পুত্র সুলায়মান (আঃ) নবী হন এবং জেরুজালেম হতে সারা বিশ্ব পরিচালন করেন। সুলায়মান (আঃ) কে আল্লাহ সবচেয়ে বড় সাম্রাজ্য দান করেছিলেন যা আর কখনো কেউ পায় নি বা পাবেও না।
এবার আসুন ঘটনা একটু অন্যদিকে নিয়ে যাই। এর জন্য দুটি জিনিস সম্পর্কে জানতে হবে। তাবুতে ছাকিনা এবং হাইকেলে সুলাইমানি।
তাবুতে ছাকিনা হচ্ছে এমন এক সিন্দুক যা আদম (আঃ) কে আল্লাহ দান করেছিলেন যা কালের পরিবর্তন এর মাধ্যমে নবি রাসূল রা পেয়েছেন। এতে সকল নবী রাসূলের স্মৃতি ছিল। বলা হয়ে থাকে এতে মূসা (আঃ) এর উপর নাযিল করা কিতাব তাওরাতের অরিজিনাল কপি ছিল। এবং মূসা (আঃ) এর সময় বনী ইসরাইল এর জন্য জান্নাত হতে যে পাত্রে খাবার আসত তাও সংরক্ষিত ছিল। বনী ইসরাইল যখনই কোনো সমস্যায় পড়ত এই তাবুতে ছাকিনার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে দোয়া চাইত এবং তা কবুল হত। যুদ্ধের সময় এই তাবুতে ছাকিনা তাদের সৈন্যদের অগ্রভাগে রাখত যার মাধ্যমে আল্লাহর কুদরতে জয়লাভ করত।
সময়ের ব্যাবধানে এই তাবুতে ছাকিনা আসে দাউদ (আঃ) এর কাছে। জেরুজালেমে এই তাবুতে ছাকিনা সুরক্ষিত রাখার জন্য দাউদ (আঃ) একটি বিল্ডিং স্থাপনা শুরু করে। বস্তুত এই বিল্ডিং ছিল বনী ইসরাইল এর প্রথম পাকা দালান। দাউদ (আঃ) তার জীবদ্দশায় এই স্থাপনা শেষ করতে পারেনি। পরবর্তী সময়ে তার পুত্র সুলায়মান (আঃ) এই স্থাপনা সম্পন্ন করে এবং এতে তাবুতে ছাকিনা স্থাপন করে। তাই এ স্থাপনার নাম দেয়া হয় হাইকেলে সুলায়মানি। আমরা মুসলমান রা আমাদের কাবা কে যতটা সম্মান করি তখনকার বনী ইসরাইল রা এই হাইকেলে সুলাইমানি কে ততটা পবিত্র স্থান হিসেবে মানত।
সময়ের ব্যাবধানে বনী ইসরাইল রা তাদের চিরাচরিত চরিত্রে ফিরে গেল সুলাইমান (আঃ) এর মৃত্যুর পর। আবারো আল্লাহর অবাধ্য হল। ফলে আল্লাহর আযাব নেমে আসল। বাবুল (বর্তমান ইরাক) এ ছিল এক জালিম বাদশাহ নাশের। নাশের বনী ইসরাইল এর উপর হামলা করে। তাবুতে ছাকিনার সাথে নাশের অনেক বেয়াদব আচরন করে এবং বনী ইসরাইল দের আদেশ দেয় তাদের নিজ হাতে হাইকেলে সুলাইমানি ভেংগে ফেলতে। তারা বাধ্য ছিল বলে কাদতে কাদতে হাকেলে সুলাইমানি ভাংতে থাকে। নাশের সেই যুদ্ধে ৬ লক্ষ হত্যা করে এবং দুই লক্ষ বনী ইসরাইল কে বন্দি করে নিয়ে যায় তার সাথে। তাদের সেখানে একটি স্থানে থাকতে দেয়া হয় যার নাম বর্তমান তেল আবিব। বনী ইসরাইল রা আবারো তাদের আদি নিবাস জেরুজালেম হতে উচ্ছেদিত হয়৷ কেননা আল্লাহ বলেছিলেন তোমরা অবাধ্য হলে আমি তোমাদের লাঞ্চিত বঞ্চিত করব।
যেহেতু জালিম বাদশা নাশের তাবুতে ছাকিনার সাথে বেয়াদবি আচরন করেছিল তাই আল্লাহর ইচ্ছায় এবং বনী ইসরাইল এর প্রতি দয়া করে আল্লাহ এক কোমল হ্রদয়ের বাদশাহ জুলাকার নাইন দ্বারা নাশেররের উপর হামলা করা হয়। সে যুদ্ধে নাশের পরাজিত হয় এবং জুলকার নাইন সেই দুই লাখ বন্দী বনী ইসরাইল কে পুনরায় জেরুজালেমে নিয়ে আসে এবং হাইকেলে সুলাইমানি পুনারায় নির্মান করার আশ্বাস দেয়।কিন্ত তাতে আর তাবুতে ছাকিনা ছিল না। কেননা কেউ আর জানতে পারেনি নাশের কি করেছিল সেই তাবতে ছাকিনার। অনেক মনে করেন আল্লাহ তাবুতে ছাকিনা গায়েবি ভাবে উঠিয়ে নিয়েছেন। বস্তুত এ জুলকার নাইন কে ইয়াহুদি রা সাইরাস নামে আখ্যায়িত করে।
আবারো এক সময় বনী ইসরাইল রা আল্লাহর সাথে নাফরমানি করে। অসংখ্য নবী আসেন তাদের প্রতি তারা সকলকেই অবমাননা করে৷ এমনকি ইসা (আঃ) কে তারা মাসীহ হিসেবে মেনে নেয় না। তারা বলতে থাকে তার মা তো একজন ব্যাভিচারিনী। সে কেমন করে আমাদের মাসীহ হবে। (নাউজুবিল্লাহ)। একসময় তারা ইসা (আঃ) কে হত্যা করার জন্য তাকে ক্রুশে চড়ায়। (যদিও আল্লাহ তায়ালা তার কুদরতে ইসা (আঃ) কে দুনিয়া থেকে তুলে নেয় যা কুরান নাযিল হওয়ার আগ পর্যন্ত অজানা ছিল)
আল্লাহ তাই বনী ইসরাইল এর উপর ক্রোধান্বিত হন। অতঃপর টাইটাস নামক এক বাদশাহ বনী ইসরাইল এর উপর আক্রমন করে। আর এই যুদ্ধের পরিনাম ছিল সবচেয়ে বড়। এই যুদ্ধে আবারো হাইকেলে সুলাইমানি ভেংগে দেয়া হয় এবং বনী ইসরাইল রা সারা বিশ্বে শরনার্থীদের মত ছড়িয়ে পরে।
পরবর্তীতে ১ম বিশ্বযুদ্ধের পর যখন ব্রিটেন ফিলিস্তিনের উপর কব্জা করে তখন এই ছড়িয়ে থাকা বনী ইসরাইল দের ফিলিস্তিনের একটা অংশে থাকতে দেয়া হয়। এবং এখন যার নাম ইসরাইল।
আর ইসরাইলি বা ইয়াহুদি দের যে দেয়াল ধরে কাদতে দেখা যায় তা গ্রিয়ার ওয়াল নামে পরিচিত। বস্তুত সেই হাইকেলে সুলামানির ধ্বংসাবশেষ ই হচ্ছে গ্রিয়ার ওয়াল। ইসরাইলি বা ইয়াহুদি রা এখনো তাদের মাসীহ এর অপেক্ষায় আছে। কিন্ত তাদের মাসীহ হচ্ছে দাজ্জাল। তারা হচ্ছে বিপথগামী।